Saturday 2 January 2016

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে শাকসবজি

ছয়টি মুখ্য খাদ্য উপাদানের মধ্যে বর্তমান প্রেক্ষাপটে শাকসবজি ও ফলমূলের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। কারণ এ ধরনের খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খাদ্য লবণ, পানি, শর্করা ও কিছু প্রোটিন বিদ্যমান থাকে। শাকসবজি ও ফলমূলে স্টার্চ ও সেলোলুজ জাতীয় উপাদান প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান থাকায় এসব খাদ্যবস্তু গ্রহণের ফলে কম ক্যালরি গ্রহণের মাধ্যমে উদরপূর্তি হয়, মানে আপনি পেট ভরে খাওয়ার পরও আপনার ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা সর্বনিম্ন পর্যায়ে থেকে যায়। ক্যালরি কম গ্রহণ করলে মানুষের ওজন বৃদ্ধি ঘটে না এবং যারা মেদভুঁড়িজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন তারা শারীরিক ওজন কমানোর জন্য শাকসবজি ও ফলমূল প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করে লাভবান হতে পারবেন। শাকসবজিতে বিদ্যমান সেলোলুজ মানব পরিপাকতন্ত্রে হজম হতে না পারায়, তা থেকে কোনো রূপ ক্যালরি দেহে প্রবেশ না করার ফলে খাদ্যের মাধ্যমে ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা রহিত করা যায়। হজম না হওয়া সেলোলুজ মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে, মলে পানি ধরে রাখতে পারে, যার পরিপ্রেক্ষিতে মল নরম থাকে। সুতরাং যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন তাদের প্রতিবেলা প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল গ্রহণ করে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকেও রেহাই পেতে পারেন। যারা উচ্চরক্তচাপজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন তারা শাকসবজি ও ফলমূল প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করে খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে একটি পর্যায় পর্যন্ত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। বর্তমান বিশ্বে বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশে হৃদরোগের প্রাদুর্ভাব অনেক গুণে বৃদ্ধি ঘটেছে। এর জন্য প্রধানত উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরলকে দায়ী করা হয়ে থাকে। অধিক পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল গ্রহণের ফলে খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণকৃত কোলেস্টেরলের হজম ও শোষণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে হৃদরোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আগেই বলেছি, শাকসবজি ও ফলমূল অধিক পরিমাণে গ্রহণের ফলে ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ কমে যায়। সুতরাং বেশি পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল গ্রহণ করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হৃদরোগও প্রতিরোধ করা সম্ভব। অধিক পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল গ্রহণের ফলে পেটে গ্যাস উৎপন্ন হতে পারে এবং দিনে ২-৩ বার টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে, তবে কোষ্ঠকাঠিন্য অবশ্যই দূরীভূত হবে এবং কারও মলদারে অর্শ, গেজ বা পাইলস থাকলে তারও প্রতিকার হবে। তবে পেটে গ্যাস হওয়ার প্রবণতা দিনে দিনে কমে যেতে পারে। অনেক শাকসবজি ও ফলমূলে ভিটামিন 'এ' জাতীয় উপাদান বিদ্যমান থাকায় চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে, রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। বেশ কিছু শাকসবজি ও ফলমূলে প্রচুর পরিমাণ আয়রন বিদ্যমান থাকায় এসব খাদ্যবস্তু গ্রহণের ফলে রক্তশূন্যতা দূরীভূত হয়। যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন এবং যারা কম ক্যালরি গ্রহণের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চান তারা এসব কার্বোহাইড্রেটযুক্ত শাকসবজি ও ফলমূল অবশ্যই বর্জন করবেন। আলু, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, গাজর, কচুরমুখী, কাঁঠালের বিচি ইত্যাদি খাদ্যে বেশি পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট বিদ্যমান থাকে। সব ধরনের মিষ্টি ফলে অধিক পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট বিদ্যমান থাকে। যেমন- পাকা আম, কাঁঠাল, পাকা কলা, পাকা পেঁপে, লিচু, তরমুজ, আনারস, বাঙি, আপেল, আতা, সফেদা, আঙ্গুর ইত্যাদি। ডায়াবেটিস রোগী এবং যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চান তারা এসব সবজি ও ফল বর্জন করবেন।

ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাবর রোড, শ্যামলী।

- See more at: http://www.bd-pratidin.com/health/2015/07/25/95433#sthash.D5TRvUPo.dpuf

No comments:

Post a Comment