Thursday 24 December 2015

প্রেগনেন্সির সময়ে ও পরে সেক্স

গর্ভবতী নারী এবং তাদের সঙ্গী সবসময়ই সংশয়ে থাকে যে গর্ভকালীন অবস্থায় সেক্স করা নিরাপদ কিনা। এর ফলে কি গর্ভপাত হতে পারে? এতে কি অনাগত সন্তানের কোনো ক্ষতি হবে? কোনো নির্দিষ্ট পজিশনে কি দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব? প্রসব পরবর্তী সময়ে কতদিন পর্যন্ত শরীর যৌন মিলনের জন্য প্রস্তুত হয় না?এখানে এসব প্রশ্নের উত্তর থাকছে।

গর্ভকালীন অবস্থায় সেক্স করা নিরাপদ কিনা?
আপনি যদি স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণ করে থাকেন তাহলে সেক্স গর্ভকালীন অবস্থার প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক একটি অংশ। ইন্টারকোর্সের সময়ের স্বাভাবিক নড়াচড়া গর্ভের শিশুর কোনো ক্ষতি করে না। গর্ভের শিশু তলপেট এবং জরায়ুর পেশী দিয়ে সুরক্ষিত থাকে। আর আপনার শিশু অ্যামিনিয়টিক স্যাক’স ফ্লুইড দ্বারা সেখানে আরামে অবস্থান করে।

অর্গাজমের কারণে পেটের ভিতরের পেশীগুলির যে সংকোচন ঘটে তা পরিশ্রমের কারণে ঘটা সংকোচনের মত নয়।

তারপরও সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য কোনো কোনো চিকিৎসক গর্ভাবস্থার শেষ কয়েক সপ্তাহ সেক্স করা থেকে বিরত থাকতে বলেন। তারা বলেন, শুক্রাণুতে থাকা প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনস নামের হরমোন ভিতরের সংকোচনকে উদ্দীপিত করতে পারে।

আবার কোনো কোনো চিকিৎসক বলেন, শুক্রাণুর প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনস শুধুমাত্র পূর্ণ শারীরিক পরিশ্রম করলে অথবা গর্ভাবস্থার পরপরই সংকোচনকে প্রভাবিত করতে পারে। কারণ ক্ষত শুকানোর জন্য যে জেল ব্যবহার করা হয় তাতে এবং পূর্ণমাত্রার পরিশ্রম করলে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনস হরমোন নিঃসৃত হয়।

কিন্তু অন্যান্য চিকিৎসকদের ধারণা শুক্রাণু এবং পরিশ্রমের মধ্যকার এই সম্পর্ক পুরোটাই তাত্ত্বিক এবং সেক্স করা পরিশ্রম বাড়ায় না।

আসলে অর্গাজমের জন্য যে সংকোচন ঘটে তা পরিশ্রমের ফলে ঘটা সংকোচনের মত নয়। সুতরাং নিচের সমস্যাগুলি না থাকলে গর্ভকালীন অবস্থায় সেক্স করলে কোনো সমস্যা নেই।

wom2

গর্ভকালীন অবস্থায় যখন সেক্স করা যাবে না

আপনার যদি নিম্নে উল্লেখিত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থার কোনো একটি থাকে তাহলে আপনার চিকিৎসক হয়তো আপনাকে সেক্স না করার পরামর্শ দিবেন।

–    আপনি যদি গর্ভপাতের ঝুঁকিতে থাকেন বা অতীতে আপনার গর্ভপাত হয়ে থাকে।

–    আপনার যদি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সন্তান জন্ম দেওয়ার আশঙ্কা থাকে (এক্ষেত্রে গর্ভকালীন অবস্থার পূর্ণ মেয়াদ ৩৭ সপ্তাহের আগেই)।

–    আপনার যদি কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই গর্ভাবস্থায় রক্তস্রাব, অবশ হয়ে আসা, খিঁচুনি ইত্যাদি হয় তাহলে।

–    আপনার অ্যামনিয়টিক স্যাক থেকে যদি তরল বাইরে আসে অথবা এর আবরণী ঝিল্লী বিদীর্ণ করে।

–    আপনার জরায়ুর কার্ভিক্স যদি গর্ভকালীন অবস্থায় আগেই খুলে যায়।

–    আপনার জরায়ুর প্ল্যাসেন্টা যদি খুব ছোট থাকে।

–    যদি আপনার যমজ বা একের অধিক সন্তান জন্মদানের সম্ভাবনা থাকে।

মনে রাখবেন, আপনার চিকিৎসক যদি সেক্স নিষেধ করে দেয়, এর অর্থ হলো শুধু ইন্টারকোর্সই না, যেকোনো রকম অর্গাজম বা যৌন উত্তেজনা থেকেই একদম বিরত থাকবেন।

গর্ভকালীন সময়ে সেক্স
প্রতিটি নারীরই গর্ভকালীন অবস্থায় সব অভিজ্ঞতাই আলাদা। এ সময়ে যৌনতার ক্ষেত্রেও তার অনুভূতি আলাদা।

কারো কারো ক্ষেত্রে এই সময়ে এসে যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যায়। আবার কেউ কেউ এসময় যৌনতার সাথে আরো বেশি নিবিড় সম্পর্ক অনুভব করে এবং এসময়ে তাদের যৌন আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যায়।

গর্ভকালীন সময়ে শরীরের পরিবর্তনের সাথে যৌন আকাঙ্ক্ষার আসা-যাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। আপনি হয়ত আপনার পেটের আয়তন বৃদ্ধির সাথে সাথে আরো বেশি সচেতন হয়ে উঠতে পারেন। অথবা আরো বড় ও পরিপূর্ণ স্তনের কারণে বেশি যৌন আবেদনময়ী লাগতে পারে নিজেকে।

আপনার পার্টনারকে জানান আপনার কী ধরনের অনুভূতি হচ্ছে। পরবর্তী সময়ের গর্ভকালীন সময়ের কথা বিবেচনা করে আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে কোন পজিশন আপনার জন্য একইসাথে আরামদায়ক এবং উত্তেজনাকর।

গর্ভকালীন সময় চার মাস পার হওয়ার পর সেক্সের সময় পিঠ নিচে রেখে ‘মিশনারি পজিশনে’ শোয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করুন। এর ফলে বাচ্চার ওজনের কারণে আপনার রক্তনালীর সংকোচন ঘটার সম্ভাবনা আর থাকবে না।

এ সময়ে সেক্স আরামদায়ক করার আরেকটি উপায় হচ্ছে দুজনারই পাশাপাশি শোয়া। অথবা আপনি ওপরে পজিশন নিতে পারেন অথবা উপরে বসতে পারেন।

আর সবসময়ই যা করবেন, প্রয়োজনে কনডম ব্যবহার করুন। কারণ, এইচআইভি, যৌনাঙ্গের বিভিন্ন রোগ, বিভিন্ন ইনফেকশন পেটের ভিতরের বাচ্চার ক্ষতি করতে পারে।

গর্ভকালীন সময়ের পরে সেক্স
সন্তান জন্মদানের পরবর্তী ছয় সপ্তাহকে বলা হয় ‘প্রসব পরবর্তী সময়কাল’। এই সময়ে আপনার যৌন আকাঙ্ক্ষা জাগবে না।

যেসব কারণে এ সময়ে আপনার যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যায়:

–   প্রসবজনিত কাটাছেড়া, ক্ষত এগুলি থেকে সেরে ওঠা (নরমাল ডেলিভারিতে যৌনাঙ্গের মুখে কাটাছেঁড়া)।

–   সিজারিয়ান প্রসব হলে তলপেটের কাটাছেঁড়া থেকে সেরে ওঠা।

–   প্রসব পরবর্তী রক্তপাত প্রসবের পরে চার থকে ছয় সপ্তাহ স্বাভাবিক ঘটনা।

–   গর্ভধারণ এবং প্রসব পরবর্তী অবসাদ।

–   এ সময়ে নবজাতক বাচ্চার আপনাকে দরকার হয়।

–   হরমোন লেভেলের পরিবর্তন।

–   নবজাতককে স্তন পান করানোর কারণে স্তনে কালশিটে দাগ পড়া।

–   আবেগ সংক্রান্ত ব্যাপার, যেমন প্রসব পরবর্তী বেদনা, মাতৃত্বের কারণে তৈরি হওয়া উদ্বেগ অথবা পারিবারিক ঝামেলা ইত্যাদি।

কাটাছেঁড়া ও ক্ষত সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেলে এবং আপনার যৌনাঙ্গের স্পর্শকাতর টিস্যুগুলি সম্পূর্ণ ঠিক হয়ে গেলে যৌন মিলন করাটা নিরাপদ। ঠিক হতে সাধারণত কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে। তার সাথে সমান গুরুত্বপূর্ণ হলো, আবেগের দিক থেকে প্রস্তুত থাকা, শারীরিকভাবে আরামদায়ক এবং রিল্যাক্সড থাকা।

আপনার এবং আপনার স্বামী উভয়ের জন্যই এ সময়ে ধৈর্য্য ধরা উচিৎ। দেখা যায় প্রথম সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে আগের মত সম্পূর্ণ আনন্দময় যৌন মিলনের মত অবস্থায় ফিরে আসতে একটু বেশি সময় দরকার হয়। এই সময়কাল গর্ভকালীন অবস্থা ও প্রসব পরবর্তী সময় সব মিলিয়ে এক বছরের মত হতে পারে।

No comments:

Post a Comment